গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলা ও সহিংসতায় যখন প্রতিদিনই অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, তখন বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন একের পর এক আন্তর্জাতিক তারকা। এবার সেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোন্স’-এর তারকারাও। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নয়, অনেকে হাজির হয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের মঞ্চেও, গাজার শহীদ শিশুদের নাম উচ্চারণ করে, নিপীড়নের ইতিহাস তুলে ধরে বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছেন।
‘গেম অব থ্রোন্স’-এ রেড উইমেন চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী ক্যারিস ভেন হটেন বলেছেন, “এখন আর বসে থাকার সময় নেই। নিরপেক্ষ থাকার সুযোগও নেই। গাজায় যা হচ্ছে, তা সহ্য করা যায় না।” তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাজির হয়ে একে একে পড়ে শোনান গাজায় নিহত হওয়া প্রায় ১০ হাজার শিশুর নাম। গলা কাঁপলেও চোখে ছিল প্রতিশোধ নয়, প্রতিবাদের তীব্র আহ্বান।
এইচবিও-র একই সিরিজের আরেক তারকা চার্লস ড্যান্স, যিনি ‘টাইউইন ল্যানিস্টার’ চরিত্রে অভিনয় করে সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেন, হাজির হন ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজসহ। তুলে ধরেন ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদারিত্ব ও জাতিগত নিধনের প্রমাণ। আদালতের কাঠগড়ায় তিনি বলেন, “ইসরাইলের সন্ত্রাস একদিন ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।”
‘সার্সি ল্যানিস্টার’ চরিত্রে অভিনয় করা লিনা হিডি দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার বিরোধিতা করে আসছেন। তার ভাষায়, “ইসরাইল শিশুদের ওপর যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা কল্পনারও বাইরে।” অভিনেত্রী বহুবার ইসরাইলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছেন।
‘স্যার ডাভোস সিওয়ার্থ’ চরিত্রের লিয়াম কানিংহাম আদালতে আবেগঘন ভাষায় পড়ে শোনান এক ফিলিস্তিনি কিশোরীর চিঠি—যার পুরো পরিবার বোমার আঘাতে মারা গেছে। কিশোরীর ভাষায়, “আমি শুধু খেলতে চেয়েছিলাম, আজ আমার খেলনার বদলে শুধু ধ্বংসস্তূপ।”
অন্যদিকে ‘লর্ড নেড স্টার্ক’ চরিত্রের সান বিনের প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে রাস্তায়। তাকে দেখা গেছে ইসরাইলবিরোধী মিছিলে অংশ নিতে, হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। গাজাবাসীদের জন্য তিনি নিয়মিত তহবিল সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘ওব্রিন মার্টেল’ খ্যাত পেদ্রো পাসকেল, যিনি বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার।
তালিকায় রয়েছেন ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’-এর রেনেইরা চরিত্রে অভিনয় করা এমা ডি’অর্চিও। তার প্ল্যাটফর্মে এখন শুধু বিনোদনের প্রচার নয়, বরং মানবিক আহ্বান। সম্প্রতি তিনি লিখেছেন, “এই ভয়াবহ সময়েও যদি আপনি চুপ থাকেন, তাহলে আপনি মানবতার পক্ষে নন। এখনই আওয়াজ তোলার সময়।”
এদিকে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সুপারমডেল বেলা হাদিদ ও গিগি হাদিদ বহু আগেই সরব হয়েছেন গাজার পক্ষে। বেলা হাদিদের ভাষায়, “আমার পূর্বপুরুষদের কান্না আমি শুনতে পাই। আজ আমার ভাইবোনেরা মাটির নিচে শুয়ে। আমরা আর চুপ থাকতে পারি না।”
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ভায়োলা ডেভিস লিখেছেন, “গাজায় যা ঘটছে, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—মানবতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চুপ থাকা মানেই অপরাধে অংশ নেওয়া।” সংগীতশিল্পী রজার ওয়াটার্স স্পষ্ট করে বলেন, “ইসরাইল এক বিদ্বেষপ্রসূত রাষ্ট্র, যার কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমান।”
বলিউড তারকারাও এবার ইসরাইলি সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি রাফাহতে ঘোষিত নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে বোমা হামলায় ৭৫ জনের অধিক শিশু-পুড়ে-মারা-যাওয়ার ঘটনার পর ‘অল আইজ অন রাফাহ’ ক্যাম্পেইনে শামিল হয়েছেন আলিয়া ভাট, কারিনা কাপুর, প্রিয়াংকা চোপড়া, বরুণ ধাওয়ানসহ অনেকেই। ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করে তারা লিখেছেন, “সব শিশুর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যুদ্ধ থামাও।”
প্রিয়াংকা চোপড়া, যিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন, এবার প্রকাশ্যে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি অভিনেত্রী দিয়া মির্জা, সামান্থা রুথ প্রভুও গাজার শিশুদের জন্য সংহতি প্রকাশ করেছেন।
এই বৈশ্বিক সংহতি প্রমাণ করে, গাজার বিরুদ্ধে যে অন্যায় চলছে, তা কোনো অঞ্চলের সমস্যা নয়—এটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এবং আজকের এই প্রজন্ম আর চুপ থাকবে না, তা প্রমাণ করলেন তারকারাও।
Post a Comment