রাজশাহী জেলা, যা দেশের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল, সেখানে পেঁয়াজের বাজারে সম্প্রতি অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের মতে অস্বাভাবিক। তারা জানান, সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে দাম বাড়ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ৩০ লাখ মানুষের দৈনিক চাহিদা ৯০ টন পেঁয়াজ, যা বছরে ৩২ হাজার ৮৫০ টন হয়। অথচ, জেলা-wide পেঁয়াজ উৎপাদন প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার টন, ফলে উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫০ টন। এর পরও বাজারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘাটতিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
বর্তমানে রাজশাহীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগেও ছিল ২৫-৩০ টাকা। পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে পাইকারি পর্যায়ে দাম ৪৭-৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধ মজুত এবং সিন্ডিকেট পরিচালিত বাজার নিয়ন্ত্রণ এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ।
ক্রেতারা বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন যে, কোরবানির ঈদ আসলে দাম আরও বাড়তে পারে। পেঁয়াজ সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা, এবং অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজ মজুত করছেন, যা বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
রাজশাহীতে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন মে মাসে শুরু হয়, যা স্থানীয় তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন চললেও দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে এটি এখনো বাজারে সংকট তৈরি করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহীতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমি, তবে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, আর বর্তমানে ৮২% পেঁয়াজ আহরণ করা হয়েছে।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে দাম লাফিয়ে বেড়েছে এবং অনেক ব্যবসায়ী গুদামে মজুত করছেন, যা দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কৃষকরা ভালো দাম পেতে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উৎসাহিত হচ্ছেন।
Post a Comment